Header Ads

Header ADS

মাতৃভাষা


মাতৃভাষা

বাংলাদেশ কে সকলদেশের রাণি বলা হয়।এই দেশের ভাষা হলো বাংলা।এই বাংলা ভাষার জন্য এদেশের মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে। রফিক., জব্বার বরকত সহ আরও অনেক কে জিবন দিতে হয়েছে। চলুন সকলদেশের ভাষা নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।‘নানান দেশের নানান ভাষা, বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা?’ মাতৃভাষা সমাসবদ্ধ পদ। ব্যাকরণের দিক দিয়ে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস। অভিধানে লেখা আছেÑস্বদেশের ভাষা। ভাষা খেলা করে জিবের ডগায়। ঘোষিত হয় গলার মধ্য দিয়ে। প্রাণ লাভ করে ফুসফুসে। আসলে ওর জন্ম বুকের মধ্যে। উৎস মানুষের মন। আমাদের মাতৃভাষা তিব্বতের গুহাচারী, মনসার দর্প চূর্ণকারী আরাকানের রাজসভায় মণিময় অলঙ্কার। বরেন্দ্রভূমির বাউলের উদাস আহ্বান। প্রতিটি শিশুর জন্য মায়ের দুধ যেমন পুষ্টিকর, ঠিক তেমনি প্রতিটি মানুষের জীবনের উন্নতির জন্য মাতৃভাষা পুষ্টিকর। ভাষা যেকোনো জাতির সৃজনশীল ধী শক্তির অপূর্ব সৃষ্টি, মেধার অনন্য লালনক্ষেত্র। জাতির মননের আকর্ষণীয় স্থাপত্য। সারা বিশ্বে প্রায় সর্বক্ষেত্রে ভাষার ভূমিকা এ রকমই হয়ে থাকে। আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, বাঙালির ভাষার মাস। শুধু বাংলা ভাষাই নয়, পৃথিবীর ছোট-বড় সব জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা আর গুরুত্ব তুলে ধরার এবং জীবন দর্শনের মাস। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার করার দাবি তথা বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম সোপানের মাস। আর্থ-সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বাঙালি জাতি তার সব বঞ্চনাকে এই ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মূর্ত করতে চায়। ফলে দেখা যায়, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার পরও এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশে শহীদ দিবস ও শহীদ মিনারের আবেদন এতটুকু কমেনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ইতিহাস এমনিভাবে প্রাণ পেয়েছে, যদিও তার প্রতিটি বাঁকে রয়েছে নির্মল রক্তকণিকার মণিমুক্তা। পাকিস্তানের শাসকরা বাংলা ভাষাকে কোনোদিন সুনজরে দেখেননি। ১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত খান গণপরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে একটি ‘মূলনীতি কমিটি’ গঠন করেন এবং পাকিস্তানের সংবিধান রচনার মৌল বিষয়বস্তু নির্ধারণের ভার ওই কমিটির ওপর ন্যস্ত করেন। ১৯৫০ সালে ‘মূলনীতি কমিটি’র রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ওই রিপোর্ট পূর্ব বাংলার মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পূর্ব বাংলার নেতৃবৃন্দ এতদিন যা দাবি করে এসেছেন, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, তার কোনোটিই তাতে স্থান পায়নি। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর লিয়াকত আলী খান আততায়ীর হাতে নিহত হলে খাজা নাজিমুদ্দীন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ঢাকায় এসে ১৯৫২ সালের প্রথমদিকে ভাষার প্রশ্নটি পুনরায় উত্থাপন করেন এবং পল্টন ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উক্তিটি আবার ঘোষণা করেনÑ‘একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। এবার কিন্তু প্রতিবাদের ঝড় তুমুল আকার ধারণ করল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য প্রাদেশিক পরিষদের আসন্ন অধিবেশনকে সামনে রেখে দেশব্যাপী আন্দোলনের ভিত্তি রচনা করেন। ২১ ফেব্রুয়ারির পূর্বে কয়েকটি পথসভা, পতাকা দিবস পালন এবং সর্বত্রই জনগণের উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা জনগণের ভাষার এই মৌলিক দাবিটি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে তা ব্যাপকভিত্তিক একটি আন্দোলনের পত্তন করেন। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল সরকার ওই আন্দোলনকে চেয়েছিলেন বানচাল করতে, যদিও আন্দোলনের যৌক্তিকতা ছিল সন্দেহাতীত। পাকিস্তানের শতকরা ৮ জন লোক উর্দুতে কথা বলে। অথচ তা হবে রাষ্ট্রভাষা। আর যে ভাষায় দেশের শতকরা ৫৬ জন লোক কথা বলে, তা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করবে নাÑ এই যুক্তি একমাত্র নির্বোধ ছাড়া সবাই বোঝে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার ছিল বলদর্পী এবং ক্ষমতালোলুপ। তাই ২১ ফেব্রুয়ারির হরতালকে বানচাল করার জন্য শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। রফিক, জব্বার, শফিউর রহমান প্রমুখ অকালে ঢলে পড়লেন, ঢাকার রাজপথ রক্তাক্ত হলো; এবং এই সবকিছুই শুধু মাতৃভাষার দাবিতে। পরে ১৯৫৩ সালের কমিটির রিপোর্টের আলোকে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম ‘সরকারি ভাষা’ হিসেবে মর্যাদা দানের সুপরিশ করা হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে এবং ১৯৫৬ সালের সংবিধানে উর্দুর সঙ্গে বাংলাও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। লেখক, কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক প্রমুখ প্রত্যেকে মাতৃভাষায় তাদের কাব্য, সাহিত্য ও মতবাদ রচনা করেছেন এবং সম্মানিত হয়েছেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত মাতৃভাষা ছেড়ে ইংরেজিতে লিখতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে পুনরায় বাংলা ভাষায় লিখে সম্মানিত হয়েছেন। বর্তমানে পৃথিবীতে ৬ হাজার ৭০০-র বেশি ভাষা আছে। বর্তমান শতকে প্রতি সপ্তাহে একটি ভাষা বিলুপ্ত হচ্ছে। আমরা চাই, আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা দিন দিন আরো সম্প্রসারিত হোক। বাংলা ভাষার অনেক উন্নতি বা পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমান সরকারের দক্ষ এবং আন্তরিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে সাধারণ অধিবেশনে ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাকে যথাযথ স্থানে জায়গা দেওয়ায় ১৮৮টি দেশের সমর্থনে সারা বিশ্বে আজ যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। আর হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি দিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত এবং প্রয়াত সুরকার আলতাফ মাহমুদের সুরারোপিত কালজয়ী গানটি দলে দলে গাইছে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...।’



No comments

Powered by Blogger.